সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২২:০৬
নাহজুল বালাগার সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সব যুগের জন্য প্রযোজ্য

আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) বিভিন্ন খুতবায় নবী করিম (সা.)-এর প্রেরণাকে শুধু আরব উপদ্বীপে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং সব যুগ ও সমাজের জন্য প্রযোজ্য বলে উপস্থাপন করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আ'রাফি নাহজুল বালাগার সেই অংশগুলির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কথা এসেছে:
আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) বিভিন্ন খুতবায় নবী করিম (সা.)-এর প্রেরণাকে শুধু আরব উপদ্বীপে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং সব যুগ ও সমাজের জন্য প্রযোজ্য বলে উপস্থাপন করেছেন। যদিও কিছু খুতবায় মক্কা ও আরব উপদ্বীপের তৎকালীন সামাজিক পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে, তবুও ইমাম আলী (আ.)-এর অধিকাংশ বক্তব্য ভৌগোলিক সীমানার বাইরে গিয়ে বৈশ্বিক তাৎপর্য বহন করে।

হাওযা ইলমিয়্যার পরিচালক বলেন: নাহজুল বালাগার বর্ণনায় এসেছে যে, নবুওয়াতের সময় মানবসমাজ বিভ্রান্তি ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ইরান ও রোমের মতো বৃহৎ জাতিগুলো সব বস্তুগত শক্তি থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক অচলাবস্থায় আটকে ছিল। ইমাম আলী (আ.)-এর এই সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দেখায় যে, নবী করিম (সা.) কেবল আরব সমাজকে সংশোধনের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।

গার্ডিয়ান কাউন্সিলের ফকিহ সদস্য অতীত ও বর্তমানের তুলনা টেনে বলেন: আজও আমেরিকা ও ইউরোপের মতো বৈশ্বিক বস্তুবাদী শক্তিগুলো বাহ্যিক প্রভাবশালী অবস্থান সত্ত্বেও নৈতিক, জ্ঞানতাত্ত্বিক ও সামাজিক সংকটে জর্জরিত। যেমন এক সময় ইরান ও রোম বিভ্রান্তি ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, আজ এই শক্তিগুলোও একই পথে অগ্রসর হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, নাহজুল বালাগার সমাজতত্ত্ব শুধু ঐতিহাসিক নয়; বরং সমসাময়িক যুগের জন্যও এক বিশ্লেষণধর্মী আদর্শ।

ইমাম খোমেইনি (রহ.) বস্তুগত শক্তির ওপর নির্ভর না করে, ঐশী ইচ্ছাশক্তি ও গভীর জ্ঞানের মাধ্যমে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন। এটাই সেই মডেল, যা নাহজুল বালাগায় নবী করিম (সা.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে; অর্থাৎ ঈমান, ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহর সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে শূন্য থেকে মহত্ত্ব নির্মাণ।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবার ও বংশের পবিত্রতা
আয়াতুল্লাহ আ'রাফি নাহজুল বালাগার আরেকটি অংশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন: নবুওয়াতের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) নবী করিম (সা.)-এর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও বংশীয় দিকও ব্যাখ্যা করেছেন। এসব খুতবায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবার ও বংশের পবিত্রতা এবং নবুওয়াতের ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হযরত আলী (আ.) অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আল্লাহ্‌ নবী করিম (সা.)-কে শ্রেষ্ঠ পরিবার ও সবচেয়ে পবিত্র বংশে স্থাপন করেছেন; এক বংশ, যা সর্বদা তাওহীদ ও ইবাদতের পথে অগ্রসর হয়েছে।

তিনি এই অংশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যোগ করেন: ইমাম আলী (আ.) বলেন, আল্লাহ্‌ নবী করিম (সা.)-কে শ্রেষ্ঠ স্থানগুলোতে অর্পণ করেছেন এবং সর্বোত্তম গর্ভে স্থানান্তরিত করেছেন। প্রতিটি প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্ম এসেছে, যাতে এই মহান দায়িত্ব অব্যাহত থাকে। এই বংশ নবী ও বিশ্বস্তদের উৎস ছিল, যা শেষ পর্যন্ত নবী করিম (সা.)-এর সত্তায় পূর্ণতা লাভ করেছে। নাহজুল বালাগার এই দৃষ্টিভঙ্গি দেখায় যে, নবুওয়াত ছিল এক ঐশী নিয়মের ফল এবং পূর্ববর্তী সব নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা।

আমিরুল মুমিনিন (আ.) ছাড়া কেউই নবী করিম (সা.)-এর গভীর ও মহান চিত্র উপস্থাপন করতে সক্ষম নন
হাওযা ইলমিয়্যার পরিচালক উল্লেখ করেন:
যদি কেউ নবী করিম (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের মহত্ত্ব জানতে চান, তবে তাকে নাহজুল বালাগার দিকে তাকাতে হবে। আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) ছাড়া আর কেউই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এত গভীর ও মহান চিত্র অঙ্কন করতে পারেন না।
এই বর্ণনাগুলো শুধু নবুওয়াতের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাই দেয় না, বরং নবী করিম (সা.)-এর পারিবারিক ও ঐশী অবস্থানও স্পষ্ট করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha